29 C
Bangladesh
Saturday, June 3, 2023
spot_img

বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস যেন ফিরে না আসে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলা স্টার বিশেষ প্রতিনিধি-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার জাতীয় জাদুঘরে অগ্নিসন্ত্রাসের শিকার নিহতদের স্বজন ও আহতদের সঙ্গে কথা বলেন ও সান্ত¡না দেন

বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসের পেট্রোল বোমায় চোখের সামনে পুড়ে ছারখার হতে দেখা সন্তানকে বাঁচাতে না পারার কষ্টের কথা জানান অসহায় পিতা। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে স্বামীকে কেন পিটিয়ে হত্যা করা হলো- সেই প্রশ্ন তোলেন স্বামীহারা স্ত্রী। রবিবার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এভাবে তাদের আবেগঘন বক্তব্যে ভারী হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতায় সেই ভয়াল চিত্র এবং নিমিষেই তাদের সবকিছু শেষ হয়ে যাওয়ার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে স্বজনহারাদের আর্তনাদ আর বুকফাটা কান্নায় পুরো মিলনায়তন স্তব্ধ হয়ে পড়ে। তাঁদের কান্নায় মিলনায়তনে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থেকে শুরু করে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, গণমান্য ব্যক্তিবর্গসহ অন্য আমন্ত্রিত অতিথিরাও নিজেদের অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি।
অনুষ্ঠানে ‘আগুন সন্ত্রাসের দুর্ভোগ : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের আংশিক দৃশ্যপট’ শীর্ষক একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়। এতে সরকার উৎখাত ও আন্দোলনের নামে তিনটি বছর ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের নারকীয় তান্ডব, বীভৎস অগ্নিসন্ত্রাস, পুড়িয়ে পুড়িয়ে জীবন্ত মানুষকে হত্যা, রেল-লঞ্চ-বাস-ট্রাক-বিদ্যুৎকেন্দ্রে আগুন দেওয়ার নারকীয় তান্ডবের চিত্র ফুটে ওঠে।
প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে স্বামীহারা, সন্তানহারা, স্বামী-কন্যাহারা মায়েরা এবং পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থাকা ভুক্তভোগীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। অশ্রুসিক্ত নয়নে স্বজনহারা কয়েক মাকে বুকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী সান্ত¡না দিতে গিয়ে নিজেও কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় পুরো মিলনায়তনে উপস্থিত সবাই আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কাছে টেনে নিয়ে সবরকম সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়েও আশ্বস্ত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও রাজনীতির নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের এই ভয়াল তান্ডব দেখে শিহরিত হয়ে পড়েন।
প্রধানমন্ত্রীর সামনে প্রতিটি স্বজনহারানো পিতা-মাতা, বিধবা স্ত্রী, পিতা-মাতা হারানো সন্তানরা অভিন্ন কণ্ঠে সেই ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের প্রচ- শাস্তি দাবি করেন এবং রাজনীতির নামে এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাস যাতে আর কেউ করতে না পারে সেজন্য আর কঠোর হওয়ার দাবি জানান সরকার প্রধানের কাছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী মাথা নেড়ে তাদের দাবির সঙ্গে সহমত পোষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা সহ্য করা যায় না, এটা কোনো মানুষ সহ্য করতে পারবে না। কাজেই আমি দেশবাসীকেও বলব এ ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে।’
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের গায়ে হাত দিলে ক্ষমা করা হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, কেউ রাজনীতি করতে চাইলে সুষ্ঠু রাজনীতি করুক। আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষের গায়ে কেউ হাত দিলে তাদের রক্ষা নেই। এটা সহ্য করা যায় না। কোনো মানুষ সহ্য করতে পারবে না। আর বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার মতো বর্বরতার মর্মন্তুদ ঘটনা দেশবাসী যেন ভুলে না যায়। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস যেন আর ফিরে না আসে, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে রবিবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খ-চিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে, আমি জানি না মানুষ আবার এদের পাশে কীভাবে দাঁড়ায়? কীভাবে সমর্থন করে? ভবিষ্যতে অগ্নিসন্ত্রাসের মতো ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। দলমত নির্বিশেষে যেই হোক, এরকম ঘটনা যেন আর না ঘটে।

নির্বাচন বানচাল ও সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াত জোট চক্রের নারকীয় তান্ডব, নৈরাজ্য, অগ্নিসন্ত্রাস ও সহিংসতায় পাঁচ শতাধিক মানুষ নিহত এবং প্রায় আড়াই হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়। রাজনীতির নামে সেই আগুন সন্ত্রাস ও নাশকতার শিকার হয়ে স্বামীহারা স্ত্রী, সন্তানহারা পিতা, পিতাহারা পুত্র-কন্যা, স্বামী-কন্যাহারা অসহায় মা, পেট্রোল বোমার আগুনে ঝলসানো ক্ষত-বিক্ষত শরীর নিয়ে ভুক্তভোগীদের কয়েকজন, সেই ভয়াল ঘটনায় পঙ্গুত্ববরণকারী, অন্ধ হয়ে যাওয়া যুবক, শরীরে বীভৎস ক্ষতচিহ্ন নিয়ে সমাজ-সংসারে বোঝা হয়ে যাওয়া লোকজন এসেছিলেন জাতীয় জাদুঘরে, রাজনীতির নামে বিএনপি-জামায়াত-শিবিরের পৈশাচিক হামলায় তাদের স্বপ্ন হারিয়ে যাওয়ার দুঃসহ কষ্টের কথা জানাতে।

২০১৩ সালের ৩ নভেম্বর সিএনজিতে কর্মস্থল থেকে সাভারের নবীনগরের বাসায় ফিরছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস গ্রুপের কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। সাভারের ক্যান্টনমেন্টের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপি-জামায়াতের ছোড়া পেট্রোল বোমায় আগুন ধরে যায় সিএনজিতে। এ সময় চালকসহ বোমার আগুনে পুড়ে আহত হয়েছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়ায় তাকে আর বাঁচানো যায়নি। ৪ নভেম্বর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
‘কী অপরাধ ছিল মোস্তাফিজের। তিনি তো কোনো রাজনীতি করতেন না। তাহলে কেন মারা হলো তাকে? এ কথা বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মোস্তাফিজের স্ত্রী বীনা সুলতানা। স্বামীকে হারিয়ে দুই কন্যা সন্তানকে নিয়ে এখন সাভারের একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন মোস্তাফিজের স্ত্রী। বড় মেয়ে মাহী মোস্তাফিজ নবম শ্রেণিতে ও ছোট মেয়ে মৌসুমী মোস্তাফিজ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশুনা করেন। আগুন সন্ত্রাসের শিকার হয়ে মাহী ও মৌসুমী তার বাবাকে হারিয়েছে। এভাবে ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে পেট্রোল বোমা, ককটেল ও বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসে অনেকেই হারিয়েছেন তাদের স্বজন। আহত হয়েছেন অনেকে, পঙ্গু ও দৃষ্টিহীন হয়ে গেছেন। অনেকে সেই অগ্নিসন্ত্রাসের দুর্বিষহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে সবার একটাই দাবি বিএনপি-জামায়াতের এই আগুন সন্ত্রাসীদের বিচার করতে হবে।
অগ্নিসন্ত্রাসে অগ্নিদগ্ধ ও নিহত হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য এবং পঁচাত্তর পরবর্তী জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক আদালতে বিনাবিচারে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সদস্যদের স্বজনরাও বক্তব্য রাখেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, মন্ত্রী পরিষদ সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যগণ, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং কূটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দেশের খ্যাতনামা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর পেট্রোল বোমা হামলায় নিহত বাসযাত্রী নাহিদের মা নুরী বেগম বলেন, ‘আমার ছেলের লাশটি আমি দেখতে পারিনি। মাদারীপুর থেকে আমার ছেলে ঢাকায় এসেছিল। বিহঙ্গ পরিবহনে যাত্রী ছিল। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা বোমা মেরে আমার ছেলেকে হত্যা করল। কী অপরাধ ছিল আমার ছেলের। আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।’
পেট্রোল বোমা হামলায় নিহত মনির হোসেনের বাবা কাভার্ডভ্যান চালক রমজান আলী বলেন, ‘২০১৩ সালে ৪ নভেম্বর মাল ডেলিভারি দেওয়ার জন্য গাজীপুরের চৌরাস্তা যাই। সঙ্গে ছিল আমার ছেলে মনির হোসেন। মাল পৌঁছে দেওয়ার পর ছেলেকে বাড়ি পাঠানোর জন্য একটি সিএনজি খুঁজতে একটু সামনে যাই। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা পেট্রোল বোমা মেরে আমার কাভার্ডভ্যানটি জ্বালিয়ে দেয়। চোখের সামনে আমার ছেলেকে পুড়তে দেখেছি। ৩৮ বছর গাড়ি চালাই, কখনো কারও কোনো ক্ষতি করিনি। কিন্তু আমার নিরপরাধ ছেলেকে কেন হত্যা করা হলো। এর বিচার চাই।
আহত ও নিহতের পরিবার ওই নির্মম ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান। নিজেদের জীবদ্দশায় ওই বিচার দেখে যেতে চান। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপনকারী এসব পরিবারের সদস্যরা আর্থিক অনুদান ও জীবিকার ব্যবস্থাও চেয়েছেন।
আগুন সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদের (অগ্নিসন্ত্রাসী) বিচার হচ্ছে, হবে এবং মহান আল্লাহর তরফ থেকেই হবে। হয়ত প্রত্যেক কেসেই (মামলা) বিচার চলছে না। কিন্তু যারা এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে, অনেকের বিচারের কাজ চলছে, অনেকে শাস্তিও পাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও পাবে।’
এ সময় দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা হুকুম দাত্রী বা হুকুমদাতা তাদের কথাও আপনারা ভেবে দেখেন। যারা এই ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে আর মানুষকে কষ্ট দিতে পারে, আমি জানি না মানুষ কীভাবে আবার এদের পাশে দাঁড়ায়, এদের সমর্থন করে। আন্দোলন, মানুষের অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষকে নিয়েই তো আন্দোলন করতে হয়। কিন্তু তারা (বিএনপি-জামায়াত) মানুষের ওপরই আক্রমণ চালিয়েছে।
বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা চান না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শান্তি চাই। দেশের উন্নতি ও মানুষের কল্যাণ চাই। দেশের প্রত্যেকটা মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। সেই অধিকার সংরক্ষণ করার চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। সরকার উৎখাতের নামে ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাসের ঘটনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কীভাবে মানুষ মারে? একটা গাড়িতে যাচ্ছে জীবন্ত মানুষগুলো, সেখানে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে সেসব মানুষকে হত্যা করা হয়। কীভাবে মানুষ পারে মানুষের ক্ষতি করতে? এটাই না কি আন্দোলন! এই আন্দোলন তো আমরা কখনো দেখিনি।
ছাত্রজীবন থেকে আন্দোলন করছেন জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সামরিক শাসক আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান ও জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাজপথে থাকার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমরা তো এই কথা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। পেট্রোলবোমা দিয়ে অথবা অগ্নিসন্ত্রাস করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। সেটা কী আন্দোলন?
সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি ঘোষণা দিল অবরোধ এবং হরতাল। কিন্তু কাজ হলো মানুষকে হত্যা করা। আজ এখানে যারা (ভুক্তভোগী) উপস্থিত তারা তো সামান্য কয়েকজন। ২০১৩ সালে তিন হাজার ৬০০ জনকে পেট্রোলবোমা মেরে তারা আহত করেছে। ২০১৪ ও ১৫ সালেও করেছে। একইভাবে গাড়ি পুড়িয়ে মানুষের জীবন-জীবিকা শেষ করে দিয়েছিল। এটা কী রকম আন্দোলন? সেটাও জানি না।
২০১৩ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত মানুষ খুন করা শুরু করেছিল জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, এতে প্রায় পাঁচশ’ মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেছে এবং সাড়ে তিন হাজার মানুষ আহত হয়েছিল। অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের স্বজন ও আহতদের বক্তব্য দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, মানুষের কান্না, যন্ত্রণা ও বেদনা আজ দেখেছেন। আমি স্বজনহারা, একদিনে বাবা, মা, ভাইসহ সব হারিয়েছিলাম। এদের কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারি।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার শুধু একটাই আহ্বান থাকবে দেশবাসীর কাছে, রাজনীতি করতে চাইলে সুষ্ঠু রাজনীতি করুক, আমার আপত্তি নেই। কিন্তু আমার এই সাধারণ মানুষের গায়ে হাত দিলে তাদের রক্ষা নাই। আমি শুধু দেশবাসীকে এটুকুই বলব ঐ দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়।
’৭৫ পরবর্তী ক্যু-পাল্টা ক্যু, অন্ধকারের সময়ের কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময় প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অর্থ, অস্ত্র, মাদক তুলে দিয়ে বিপথে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ’৭৫ এর পর এই ছিল বাংলাদেশের চিত্র। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কেবল তাঁরাই স্থিতিশীলতা আনতে পেরেছিলেন। সে সময় শিক্ষার পরিবেশ উন্নত করা, উৎপাদন বৃদ্ধি তথা দেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি করতে পেরেছিলেন এবং যতটুকু সম্ভব তাঁর সরকার মানব কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আগুন সন্ত্রাসের মতো ঘটনা, এটাতো চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ ধরনের ঘটনা যেন কেউ ভবিষ্যতে আর ঘটাতে না পারে। কেননা দলমত নির্বিশেষে এদেশের প্রতিটি মানুষেরই স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। স্বাধীনভাবে নিজ নিজ জীবন-জীবিকার অধিকার রয়েছে। প্রত্যেকের সুন্দরভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার সংরক্ষণ করাটাই আমাদের দায়িত্ব। আর সেটাই চেষ্টা করে যাচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলে থাকতে শুধু আগুন সন্ত্রাস নয়, ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির সন্ত্রাসীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালায় এবং একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর মতো ধর্ষণসহ অমানবিক নির্যাতন চালায়। তিনি বলেন, আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে। তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যতটুকু পারি করেছি। কিন্তু যে মানুষগুলো আপনজন হারিয়েছে, তাদের ব্যথা, কষ্ট ও বেদনা তো দূর করা সম্ভব না। আগুনে পুড়ে অনেকের স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছিল।
আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার পর থেকে দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে আর্থ-সামাজিক উন্নতি যতটুকু সম্ভব আমরা করে যাচ্ছি। যেটুকু কাজ করে যাচ্ছি মানবকল্যাণে। কিন্তু তারই মাঝে এই ধরনের আঘাত চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আহতদের জন্য সাধ্যমতো কাজ করে যাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাই আমার দায়িত্ব। কত যে লাশ টানতে হয়েছে। কত মানুষকে সহযোগিতা করতে হয়েছে। কত মানুষের যে চিকিৎসা দিতে হয়েছে তার শেষ নেই।
কাঁচপুরে নিহত বিজিবির সুবেদার নায়েক শাহে আলমের স্ত্রী নাসরিন আক্তার আলেয়া বলেন, ‘আমার স্বামীতো রাজনীতি করেনি। সেতো দেশের কাজে নিয়োজিত ছিল। তাকে কেন এইভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হলো। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার স্বামীকে যারা এভাবে হত্যা করেছে, তাদের কঠিন থেকে কঠিনতর বিচার চাই।’ নিজে ও সন্তানেরা বেঁচে থাকতে এ বিচার দেখে যেতে চান তিনি।
অগ্নিকা-ে নিহত পুলিশ কনস্টেবল জাকারিয়ার স্ত্রী মায়া বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী গোপালগঞ্জে চাকরি করত। সেখান থেকে কাঁচপুর এলে হেফাজত বাহিনীরা আমার স্বামীরে হত্যা করছে। এর বিচার আমি চাই।’ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে দুইটা। তাগো কিছু ব্যবস্থা কইরবেন। আমার শইল সুস্থ না, সেটার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন।’
হামলার ঘটনা বর্ণনা করে চট্টগ্রামের চিত্র সাংবাদিক আবু সাঈদ তামান্না বলেন, ‘রাজনীতিটা প্রতিযোগিতামূলক ও সুন্দর হবে। সেটাই আমরা চাই। রাজনীতির নামে মানুষকে মারবে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা বিচার চাই।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত আবারো শুরু করেছে। আবার সেই একই কাহিনী। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তারা আবারও পুরনো পরিকল্পনা করেছে। আমরা সবাই প্রতিহত করব।’
২০১৩ সালের মার্চে রাজশাহীর সাহেব বাজারে বোমা হামলায় আহত পুলিশের এসআই মকবুল হোসেন বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের নিক্ষিপ্ত বোমায় আমার দুটি হাত হারিয়ে ফেলি। আমি আহত হয়েছি, পঙ্গু হয়েছি। কিন্তু মনোবল হারাইনি। কিন্তু এখনো জামায়াত-শিবিরের কথিত সাংবাদিক প্রতিনিয়ত বিভিন্ন নামে-বেনামে আমার বিরুদ্ধে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে দরখাস্ত দিয়ে আমার পদোন্নতি আটকে দিয়েছে। জামায়াতের বিভিন্ন সাংবাদিক পুলিশের মনোবল নষ্ট করতে ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমরা মানুষের জানমাল রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত।’
অগ্নিসন্ত্রাসীদের বিচার চান ঠাকুরগাঁওয়ের ট্রাক ড্রাইভার রফিকুল ইসলাম। ২০১৩ সালে বাসে আগুন দেওয়া হলে তাতে আহত হন রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দোকান কর্মচারী সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আগে কর্ম করে খেতাম। কিন্তু আগুনে পুড়ে এখন আমার চেহারা বিকৃত হওয়ার পরে কেউ চাকরি দিতে চান না। আমার কাজ করার শক্তি আছে, কিন্তু কেউ কাজ দেয় না। আমার দুইটা ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে, তাদের একটা কিছুর ব্যবস্থা করুন। আমি আপনার সঙ্গে থাকতে চাই। আমাকে একটু কাজ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন।’

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,795FollowersFollow
20,800SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles