
বাংলা স্টার রিপোট-চাঁদপুর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।রবিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে ডিসি অফিসের সম্মেলন কক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসান।
জেলা প্রশাসক বক্তব্যে বলেন, এবছরের মা ইলিশ সংরক্ষন অভিযান আমরা শেষ করেছি। তবে এই অভিযান আরও ভালো হতে পারত। আগামী জাটকা অভিযানে কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি আমরা পুলিশ সদস্যদের সম্পৃক্ত রাখব। নদীর মধ্যে জাক দিয়ে ছোট ছোট দেশীয় মাছের পোনা ও ঝাটকা ধরা যাবে না। সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, আমাদের মহিলা অধিদপ্তর গত ১৫ বছর ধরে যে পরিমাণ সেলাই মেশিন বিতরণ করেছেন এতে বাংলাদেশের ৫০% মানুষ দর্জি হয়ে যাওয়ার কথা। এটা কিন্তু একটা বড় কর্মসংস্থানের জায়গা। আমরা আশ্রয়ন প্রকল্পের মানুষদেরকে পরামর্শ দিয়ে এই কাপড়ের ব্যাগ গুলো উৎপাদনের দিকে এগিয়ে নিতে পারি। কাঁচা বাজারে ও ঔষুধের দোকানগুলোতে কোন লোক পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করতেই পারবে না। এই পলিথিনের কারণে পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। ফসলি জমিও ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আরো বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আমাদের সামাজিক মূল্যেবোধের উন্নয়নও করতে হবে। বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে আমাদের তরুণ-তরুনীরা বিভিন্ন অসামাজিক কাজে মনের অগোচরে জড়িয়ে যাচ্ছে। যার পরিনাম আমাদের জন্য মঙ্গলজনক এবং সুখকর না।
ডিসি বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শিক্ষক ও অভিভাবকদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ তৈরি করতে হবে। যাতে সমাজে কিশোর গ্যাং সৃষ্টি না হয়। বাল্য বিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। এই ব্যাধি থেকে সমাজকে উত্তোরন করতে হলে নজরদারি বাড়াতে হবে। আমরা যদি এই ব্যাধি থেকে বের হতে না পারি আমাদের সামাজিক অবক্ষয় দিন দিন বাড়তেই থাকবে।
মাদকের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, প্রতিমাসে প্রতিটি উপজেলায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ২ টি করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে আগামীতে যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগের সময় মান সম্মত শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কারণ আমারা অনেক প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনে নিয়ে আশানুরূপ ফলাফল পাইনি। শহরের যানজট নিরসনে সকল অবৈধ স্থাপনা অচিরেই উচ্ছেদ করা হবে। এই উচ্ছেদ অভিযানে চাঁদপুর পৌরসভার পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের লোকজনও থাকবে। আমরা চাই একটি সুশৃংখল ও পরিকল্পিত শহর।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত রায় বলেন, গত মাসের তুলনায় আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ক্রাইমের আশঙ্কা অনেক কমে এসেছে। বড় ধরনের ক্রাইম থেকে চাঁদপুর এখন অনেকটাই মুক্ত আছে বলে আমি মনে করি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ এবং আইন-শৃঙ্খলা কে ঠিক রাখার জন্য প্রত্যেকটা যে দপ্তর আছে যারা আইনশৃংখলার সাথে সম্পৃক্ত তারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজটা করছেন বলেই চাঁদপুরের বর্তমান অপরাধ প্রবণতা কমে আসছে। একটা এলাকায় যখনই কোন দুর্যোগ বা অশান্তি চলে আসে তাহলে কিন্তু এই এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিটা ও একটু নগ্ন হয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে আমরা পূর্বের তুলনায় আমি মনে করি অনেকটাই ভালো অবস্থানে আছি এবং চাঁদপুর বেশ ভালো অবস্থানের দিকেই আছে।
কিশোরগ্যাংয়ের ব্যাপারেও আমাদের নিয়মিত অভিযান আছে। কয়েকদিন আগেও কিশোর গ্যাংয়ের বেশ কয়েকজন সদস্য এবং কিশোর অপরাধী যারা এই বয়সে যারা কিশোর অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে তাদেরকে কিন্তু আটক করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গত চার দিন আগে মতলব উত্তরে যারা এই অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট আমাদের পুলিশ সুপার মহোদয় এখানে একটি স্পেশাল পোর্সিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। পাঁচজন অপরাধী একদম ডাকাত, ডাকাতির সাথে যারা সম্পৃক্ত কয়েকজন কুখ্যাত ডাকাত, ডাকাতির মালামাল সহ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা সেই ব্যাপার গুলিতে সচেষ্ট আছি।
তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরে যানজট সমস্যা ব্যাপক আকারে বিস্তৃত শুধুমাত্র পুলিশ একক ভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানজটের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব না। যানজট নিরসনের জন্য কয়েকটা বিকল্প রাস্তা বেছে নিয়ে শহরের বাইরের গাড়িগুলো বের করতে পারি তাহলে কিন্তু শহরে যানজট নিরসন করা যাবে। বর্তমানে দেশে একটি অর্থনৈতিক প্রভাব কিন্তু আছেই। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে পুরা বিশ্বেই অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে এটা আমরা সকলেই জানি। সেই প্রভাবকে কাটিয়ে উঠার জন্য আমাদেরকে সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।