
বাংলা স্টার নিজস্ব প্রতিবেদক-সন্তানরা কোনো বিখ্যাত স্কুলে না পড়লে ভালো শিক্ষা পাবে না অভিভাবকদের এমন মানসিকতা পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ফলাফলমুখী হয়ে স্কুুল বাছাবাছির যে প্রবণতা, তা বন্ধের জন্য সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান বাড়াতে হবে। ভালো শিক্ষার্থী নিয়ে ফল ভালো করায় কোনো কৃতীত্ব নেই। বরং অপেক্ষাকৃত দুর্বল শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভালো ফল করানোয় কৃতীত্ব¡ বেশি। যদিও অতীতে দেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিজ্ঞানী, সিভিল সার্ভিস অফিসার এবং নেতারা জেলা স্কুল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। দেশের বহু জ্ঞানী, বিজ্ঞানী, নেতা, পাকিস্তান আমলের বহু সিএসপি অফিসার জেলা স্কুলগুলো থেকে পাস করেই হয়েছেন। এখন কারও কারও ধারণা এমন যে, মাত্র কয়েকটা স্কুল ভালো, ওখানে না পড়লে ভালো পড়া হয় না। এই যে মানসিকতা এটাও বদলাতে হবে।
সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তার হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ ও পরিসংখ্যান তুলে দেন। পরে বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা স্ব স্ব বিভাগের ফলাফলের পরিসংখ্যান প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অনেক অসুবিধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেজন্য সরকার নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষা অব্যাহত রাখতে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস এবং যুদ্ধ আমাদের জন্য অনেক বাধা তৈরি করেছে। আমরা এ সম্পর্কে আগে থেকেই সচেতন ছিলাম। তবে আরও সতর্ক এবং সাশ্রয়ী হতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার নতুন প্রজন্মকে উপযুক্ত শিক্ষা প্রদান করে সময়োপযোগী করে প্রস্তুত করতে নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও বিজ্ঞানের অগ্রগতির পাশাপাশি পরিবর্তনশীল বিশ্ব পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করে চলেছে যাতে তারা আধুনিক সমাজে প্রতিযোগিতা করতে পারে। তরুণরা বাংলাদেশের শক্তি, তাই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য তাদের যোগ্য হিসেবে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব দরজায় কড়া নাড়ছে এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে তা ডিজিটালাইজড ব্যবস্থায় রূপান্তরিত হবে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আবির্ভাবের ফলে দেশে ও বিদেশে দক্ষ জনশক্তির চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ায় তার সরকার দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের শিশুদের শৈশব থেকেই এমনভাবে শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সূচনার পর থেকে পরিবর্তনগুলো মোকাবিলা করতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে যেখানে বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগ প্রচুর পরিমাণে আসবে এবং বিপুল দক্ষ জনবলের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশিদের অদক্ষ জনশক্তি হিসেবে বিদেশে পাঠানোর পক্ষপাতী নন বরং যোগ্য হিসেবে পাঠানোর পক্ষে। তাই শিক্ষাকে বহুমাত্রিক (শিক্ষায় বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং বৃত্তিমূলক মাধ্যম অন্তর্ভুক্ত করে) করছি, যাতে দেশ আধুনিক শিক্ষার সুবিধা কাজে লাগাতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থীরা ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে যা তাদের ভাগ্য গড়তে সাহায্য করবে। কারণ সবাই বিএ এবং এমএ ডিগ্রি নিয়ে বড় পদে যাবে না। কেউ যেন পরীক্ষায় ফেল না করে সে জন্য শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগী হওয়ার বিষয়ে আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা এবং অন্যদের পরেরবারের জন্য শুভ কামনা জানান।
তিনি বলেন, সরকার শিক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। কারণ শিক্ষা ছাড়া কোনো দেশ দারিদ্র্য দূর করতে পারে না। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনকালে ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে শিক্ষকদের সরকারি চাকরির মর্যাদা দিয়ে দেন। তিনি সংবিধানেও শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রাথমিক এবং নারী শিক্ষাকে অবৈতনিক করে দেন।
সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেমন শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যবই প্রদান, উপবৃত্তি ও বৃত্তি প্রদান, বিনামূল্যে স্কুল ফিডিং প্রবর্তন এবং শিক্ষার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন স্কুল, কলেজ ছাড়াও সাধারণ, চিকিৎসা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন। আমরা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছি এবং যথাসময়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের জন্য তৎপর রয়েছি। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। সুতরাং, আমাদের একটি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে হবে যে, আমরা কখনোই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা থেকে পিছিয়ে পড়ব না।’