
বাংলা স্টার বরিশাল প্রতিনিধি-বরিশালের বানারীপাড়ার ইলুহার ইউনিয়নের পশ্চিম মলুহার ও বিশারকান্দি ইউনিয়নের উমারেরপাড় সংযোগ খালে বাঁশের সাঁকো যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। যুগের পর যুগ ধরে পার্শ্ববর্তী দুটি ইউনিয়নের দুই গ্রামের মানুষকে ঝুঁকি ও আতঙ্ক নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে।
বিশেষ করে বিশারকান্দি ইউনিয়নের পূর্ব উমারেরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উমারেরপাড়-মলুহার নেছারিয়া নূরানি হাফেজি মাদরাসার শিশু শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যেতে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিশুসন্তানদের স্কুল ও মাদরাসায় পাঠিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন অভিভাবকরাও। এই শিশুশিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকেই সাঁতার জানে না। ফলে বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে পার হতে গিয়ে নিচে খালে পড়ে গেলে পানিতে ডুবে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে তাদের।
উমারেরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া মেহেদী হাসান নামে এক শিক্ষার্থী বলে, সাঁকোতে উঠলেই কাঁপাকাঁপি করে সেটি। পা টিপে টিপে অতি সাবধানে পার হতে হয় সাঁকো। একটু পা পিছলে গেলে পড়ে যেতে হবে খালে। কদিন আগেও আমাদের এক সহপাঠী সাঁকো থেকে পড়ে গিয়েছিল খালে। পরে পাড় থেকে একজন সাঁতরে এসে বাঁচায় তাকে।
ইয়াসমিন নামে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়া এক শিক্ষার্থীর বাবা মেজবাহ উল আলম বলেন, আমার ৭ বছরের মেয়েটা এখনও সাঁতার জানে না। স্কুলটা খালের ওই পারে হওয়ায় এই সাঁকো দিয়েই সবসময় যেতে হয় তাকে। নিজেই কোলে করে মেয়েটাকে স্কুলে নিয়ে যাই বেশিরভাগ সময়। কিন্তু প্রতিদিনই তো সময় হয় না। সবসময় স্কুল থেকে নিয়েও আসতে পারি না। মেয়েটা যতক্ষণ ঘরের বাইরে থাকে ততক্ষণই চিন্তা করে মরি।
এ ছাড়া এ সাঁকো পেরিয়ে প্রসূতিসহ নারীদের নিয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিক এবং বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলেই পড়তে হয় বেকায়দায়। জরুরি মুহূর্তে রোগী বহন করে নেওয়া হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য। এ ছাড়া মুসল্লিদের পূর্ব উমারেরপাড় ও মলুহার বায়তুল আমান মসজিদে নামাজ আদায় ও স্থানীয় তালতলা বাজারে কেনাকাটা করতে যেতে ও বাড়ি ফিরতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বয়স্কদের।
এদিকে এলাকাবাসী জানায়, যুগের যুগ এই অসহনীয় দুর্ভোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে তারা স্থানীয় দুই ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিদের কাছে বারবার আবেদন-নিবেদন করলেও শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য ‘মরণফাঁদ’ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই বাঁশের সাঁকোর স্থলে একটি পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি। তারা এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. শাহে আলম ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ গোলাম ফারুকের সৃদৃষ্টি কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে ইলুহার ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি তার ইউনিয়নের পাশর্^বর্তী ইউনিয়নের অধিকাংশ সংযোগ খালে পাকা ব্রিজ নির্মাণ করে দিয়েছেন। তাই তার দাবি, ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁশের সাঁকোর স্থলে বিশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে যেন পাকা ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
বিশারকান্দি ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম শান্ত বলেন, দুই ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে পাকা ব্রিজ নির্মাণ করে জনদুর্ভোগ লাঘব করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বানারীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ গোলাম ফারুক বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ এ বাঁশের সাঁকোর জায়গায় একটা লোহার ব্রিজ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।