31 C
Bangladesh
Tuesday, September 26, 2023
spot_img

টিউশনি করে ‘এ প্লাস’ পেলেন যমজ বোন

বাংলা স্টার কুষ্টিয়া প্রতিনিধি -বাবা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগী। টিউশনি করিয়ে মা যা আয় করেন তা দিয়েই কোনো রকম চলে সংসার। এমন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে বাড়ির বাইরে বের হতে হয় সামিয়া খাতুন ও সাদিয়া খাতুন নামের যমজ বোনদের। ছোট শিশুদের টিউশনি পড়িয়ে যা আয় হয়েছে তা দিয়েই নিজেদের লেখাপড়ার সমস্ত খরচ জুগিয়েছেন তারা। আর এরই ফলস্বরূপ এবারের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন ‘এ প্লাস’ পেয়েছেন তারা।

এদিকে, দুই বোনের এমন সাফল্যে দারুন খুশি তাদের পরিবার, এলাকাবাসীসহ স্কুলের শিক্ষকরা। সামিয়া-সাদিয়াকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সামিয় ও সাদিয়ার বাড়ি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল হাজিপাড়া গ্রামে। তারা মো. আশরাফুল ইসলাম ও মোছা. আসমা খাতুন দম্পতির মেয়ে। সামিয়া-সাদিয়ারা তিন বোন। বড় বোন নির্জনা আক্তার শননও মেধাবী ছাত্রী। বর্তমানে তিনি পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনেকদিন ধরেই সামিয়া-সাদিয়ার বাবা আশরাফুল ইসলাম মানসিক রোগে আক্রান্ত। সারাদিন বাড়িতেই থাকেন তিনি। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি অসুস্থ থাকায় তিন মেয়েকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন আসমা খাতুন। স্বামী আশরাফুলের চিকিৎসার খরচসহ মেয়েদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে নিজেই সংসারের হাল ধরেন তিনি। এইচএসসি পাস হওয়ায় বাড়ির আশপাশের ছেলে মেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে এবং পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া আশরাফুলের সামান্য মাঠের জমি লিজ দিয়ে কোনো রকম সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছেন তিনি।

জন্মের পর কখনোই বাবা আশরাফুল ইসলামের স্বাভাবিক আচরণ দেখেনি সামিয়া ও সাদিয়া। অভাবের টানাপড়েনের সংসারে তাই বাবার কাছে আবদারের বিষয়টি অবান্তরই ছিল তাদের কাছে। কিন্তু মা আসমা খাতুন তাদের সেই অভাব কখনোই বুঝতে দেননি। যতটুকু পেরেছেন টিউশনি করে মেয়েদের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার গুরু দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কিন্তু তিনি মেয়ে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসারে শুরু হয় আরো টানাপড়েন। তাই পড়ালেখা চালিয়ে নিতে সামিয়া ও সাদিয়া শুরু করেন টিউশনি। নিজেরা প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়ার সুযোগ না পেলেও প্রতিবেশী স্কুল পড়ুয়া শিশু শিক্ষার্থীদের পড়িয়ে নিজেদের লেখাপড়ার খরচ জোগান দিতে শুরু করেন তারা। একই সঙ্গে বেঁচে যাওয়া অতিরিক্ত টাকা সংসারে দিয়ে মাকে সাহায্য করতে থাকেন এই দুই বোন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন সামিয়া ও সাদিয়া। আশা ছিল ভালো রেজাল্ট করার করেছেনও তাই। পেয়েছেন গোল্ডেন এ প্লাস। 

সন্তানদের ফলাফলে দারুন খুশি মা আসমা খাতুন। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতাও চেয়েছেন তিনি।সামিয়া-সাদিয়া জানান, বড় আপুর সাফল্য আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার কাজ করেছে। 

মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. রাশিদা বানু বলেন, ‘অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা যমজ বোনরা লেখাপড়ায় খুবই ভালো। পড়ালেখার প্রতি তাদের আগ্রহও অনেক। আমরা আমাদের স্কুলের পক্ষ থেকে সামিয়া-সাদিয়াকে অনেক সহযোগীতা করেছি। তাদের আরো সফলতা কামনা করছি।’ 

মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘সামিয়া-সাদিয়াকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সবধরনের সহযোগীতা করা হবে। শিক্ষায় জাতীর মেরুদণ্ড, সু-শিক্ষিতরাই পারে একটি সন্দুর সমাজ গড়তে। তাই চরম প্রতিকুলতার মধ্যেও এগিয়ে চলা সামিয়া- সাদিয়ার মেধা বিকাশে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে এমনটায় প্রত্যাশা করছি।’

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,871FollowersFollow
21,200SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles