
বাংলা স্টার রিপোট-মিয়ানমারের সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশ যে বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে, তা নিরসনের লক্ষ্যে সফরে আসছেন বাইডেন প্রশাসনের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস। মার্কিন সহকারী মন্ত্রী আগামীকাল শনিবার বাংলাদেশ আসছেন এবং ৭ ডিসেম্বর তিনি ফিরে যাবেন। এই সফরে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে প্রত্যাবাসন এবং বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রয়োজন মেটাতে তহবিল সংকট সমাধানসহ রোহিঙ্গা ইস্যুর সার্বিক বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসনবিষয়ক মার্কিন সহকারী মন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সঙ্গে মূল বৈঠকে বসবেন। যেখানে রোহিঙ্গা সংকট মূল আলোচনার বিষয়।
এ ছাড়া জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েসের রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গেও বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। মার্কিন সহকারী মন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট সরেজমিন দেখতে কক্সবাজার এবং ভাসানচরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিবিরগুলো পরিদর্শন করবেন এবং রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করবেন। মার্কিন সহকারী মন্ত্রীর সফরে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দ্রুততম সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এর বাইরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দেখভালের জন্য যে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান বা জেআরপি গঠন করা হয়েছে, সেখানে জেআরপি তহবিলে যে সংকট দেখা গেছে তা কীভাবে মেটানো যায়, সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
এ ছাড়া গত ২৫ আগস্ট মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্থনি ব্লিনকেন রোহিঙ্গাদের তার দেশে আশ্রয় দেওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছিলেন সে বিষয়ে অগ্রগতি নিয়ে আলাপ হবে। চলমান বৈশ্বিক উত্তেজনার কারণে রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগ হারাচ্ছে, তাই বিষয়টি সমাধানের জন্য কীভাবে আলোচনায় রাখা যায় সে বিষয়েও আলাপ হবে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, সহকারী মন্ত্রী জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েসের সফরসূচি চূড়ান্ত করতে দুই পক্ষের কর্মকর্তারা কাজ করছেন।
অন্যদিকে গত ১৫ নভেম্বর দুপুরে ভাসানচরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে গঠন করা জাতীয় টাস্কফোর্স কমিটির ৪০ তম বৈঠক পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র) মাসুদ বিন মোমেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইসসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকটি হাইব্রিড পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র) মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোই বাংলাদেশের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।’
রোহিঙ্গা তহবিল সংকট নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব ওই বৈঠকে জাতিসংঘকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তনের ফলে রোহিঙ্গা সংকট আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোযোগে ধরা রাখা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে ২০২২ সালে জেআরপি তহবিলে এবং জেআরপি তহবিলে সংকট রয়েছে। জেআরপি তহবিলের সংকট মেটাতে জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হবে।’
ওই বৈঠকে জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস বলেন, ‘মিয়ানমারের সৃষ্টি করা রোহিঙ্গা সংকট উদ্বেগের। মিয়ানমারের রাখাইনে তাতমাদো এবং আরাকান আর্মি এই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চলায় সেখানে জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। জেআরপি তহবিলেও সংকট দেখা যাচ্ছে। তহবিল সংকট মেটাতে বিকল্প পদ্ধতি বের করতে হবে।’
এর আগে গত সপ্তাহে ইন্ডিয়ার ওশান রিম অ্যাসোসিয়েশনের সম্মেলনে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের জানান যে রোহিঙ্গাদের জন্য জেআরপি তহবিল সংকট দেখা যাচ্ছে। এই সংকট সমাধান করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি বলেন, ‘জাপান সরকার মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারে তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের পক্ষে এবং অন্যান্য বেসরকারি ও উন্নয়ন অংশীদারদের মতো জাপানও রোহিঙ্গাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সাহায্য করে যাচ্ছে। তবে মিয়ানমারের শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গাদের দক্ষতার উন্নয়ন ছাড়া এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়।’