
বাংলা স্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া রিপোট-মেঘনার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে পড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পানিশ্বর ইউনিয়ন। ইতিমধ্যে দক্ষিণের কালাসুতা থেকে দেওবাড়িয়া পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটারজুড়ে থাকা ৫টি গ্রাম বিলুপ্ত হয়ে গেছে নদীগর্ভে। ভাঙন আতঙ্কে সরাইলের একালাবাসী।
স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা গেছে, গত ৫ বছরে মেঘনায় বিলীন হয়েছে সরাইলের পানিশ্বর বাজারসংলগ্ন ২২টি চাতালকল, শতাধিক ঘরবাড়িসহ দোকান। প্রতিবছর মেঘনার বুকে সরাইলের একটা অংশ বিলুপ্ত হয়ে যাবে-এটাই যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এখানে। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর ইতিমধ্যেপানিশ্বরের দক্ষিণের কালাসুতা থেকে দেওবাড়িয়া পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার অংশে ৫টি গ্রামের বসতঘর, চাতালকল বিলীন হয়ে গেছে মেঘনার বুকে। আর উপজেলার কুমারপাড়া, লায়েরহাটি, এলাইবক্সের বাড়ি, সাহাইতি বাজার, দেওবাড়িয়া, নতুনহাটি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে মেঘনা এক আতঙ্কের নাম। ভাঙনের আশঙ্কায় দিন গুনছেন তারা। এতকাল যে মেঘনা বাঁচিয়ে রেখেছিল তাদের, এখন সেই মেঘনা-ই হয়ে উঠেছে দুঃখের প্রধান অনুষঙ্গ। প্রতিবছরই একটু একটু করে ভাঙছে নদী তীরবর্তী এলাকা। এই অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে এই জনপদ। পানিউন্নয়ন বোর্ডেও অধীনে প্রতিবছরই জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ফিবছর এ পদ্ধতি কাজে না আসা সত্ত্বেও অধিকতর উন্নয়নের জন্য বেড়িবাঁধ প্রকল্পের আশ্বাস দেওয়া হলেও চোখের সামনে প্রতীয়মান হয়ে ওঠেনি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।
নদীভাঙনের শিকার মিজান বলেন, প্রতিবছরই নদীতীর ভাঙে। ভাঙনের প্রকোপ বেড়ে গেলেই কয়েকজন (পাউবো কর্তৃপক্ষ) এসে জিও ব্যাগ দিয়ে যায়। কিন্তু এই ব্যাগ দিয়ে যে কিছু হয় না সেটা তারাও জানেন। তারপরেও একই কাজ চলতে থাকে। ভাঙনের এখন যে অবস্থা এখানে একটা বেড়িবাঁধ না করা হলে এলাকাটিকেই বাঁচানো সম্ভব হবে না।
সরেজমিন রোববার সকালে ভাঙনকবলিত মেঘনার পারে গেলে,পানিশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সাদু মিয়া বলেন, আগে মেঘনার এমন ভয়াবহ রূপ ছিল না। ৫-৬ বছর ধরে ভাঙনের শিকার হয়ে বিলীন হয়েছে ২২টি চাতালকল ও শতাধিক ঘর-বাড়ি। বছর বছর শুধু জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ অসম্ভব-এমন মন্তব্য করেপানিশ্বর কে রক্ষার স্বার্থে অনতিবিলম্বে বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
পানিশ^র ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান মিস্টার জানিয়েছেন, নদীর মাঝখানে চর জেগে উঠার কারণে পানির স্রোতের প্রবাহপানিশ্বর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়ার ফলেপানিশ্বর এলাকার এই ভয়াবহ ভাঙন। গ্রামের কুমারপাড়া, লায়েরহাটির অধিকাংশ বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখন বাজারসহ পুরো এলাকা বিলীন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন,পানিশ্বর কে রক্ষা করতে হলে জরুরিভিত্তিতে বেড়িবাঁধ প্রয়োজন। একই সঙ্গে ভাঙন প্রতিরোধে জেগে ওঠা চর ড্রেজিং করার দাবি জানিয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেনপানিশ্বর ও চাতলপাড় এলাকার ভাঙন প্রতিরোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা দাখিল করা হয়েছে এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া অনেক দূর এগিয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, আমি মাত্র যোগদান করেছি। আপনার মাধ্যমে এমন একটি বিষয় এই প্রথম জানতে পেরেছি। আমি ভাঙন এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করব।