29 C
Bangladesh
Saturday, September 30, 2023
spot_img

যুদ্ধ চাই না শান্তি চাই বিশ্ব নেতাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বাংলা স্টার প্রতিনিধি-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কল্যাণে অবিলম্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে বিশ্ব নেতাদের প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। আমরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সকল বিরোধ ও মতভেদ দূর করতে চাই। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে সরকার উন্নত ও শক্তিশালী করে চলেছে, কিন্তু সেটা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য নয়।
নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাবের সঙ্গে অপরাধের ধরন পরিবর্তিত হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রথাগত ও অপ্রথাগত হুমকি মোকাবিলা প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ‘ট্র্যডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেট’ এর পাশাপাশি ‘ননট্র্যাডিশনাল সিকিউরিটি থ্রেট’ সমূহ প্রতিহত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। এখন নিরাপত্তার বিষয়টি অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে। ডিজিটাল ডিভাইস যেমন আমাদের অনেক সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ কিংবা অপরাধের ধারাটাও পাল্টে গেছে।
মঙ্গলবার মিরপুর সেনানিবাসের ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি) শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে ‘ডিএসসিএসসি কোর্স ২০২২’ এর গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনিতে গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। অনুষ্ঠানের শুরুতে কলেজের কমানড্যান্ট মেজর জেনারেল ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা আবারও দেশবাসীকে ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজবের বিরুদ্ধে সতর্ক করে বলেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহল ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং তারল্য নিয়ে গুজব ছড়ানোর চেষ্টা করছে, তাই গুজবে কান দেবেন না। তিনি ব্যাংকে পর্যাপ্ত বৈদেশিক রিজার্ভ এবং তারল্য থাকার বিষয়ে জনগণকে আশ্বস্ত করে আবারও বলেন, দয়া করে কেউ যাচাই না করে গুজবে কান দেবেন না বা বিভ্রান্ত হবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দেশে থাকুক, সেভাবেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি এবং আমাদের লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ অর্থাৎ বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষই এই ডিজিটাল ডিভাইস সম্পর্কে জানবে, ব্যবহার করবে।
তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ খুব স্পষ্ট। আমরা জাতির পিতার গৃহীত পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করছি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে প্রত্যাবাসন নিয়ে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো বিবাদে জড়াননি। আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি।
প্রধানমন্ত্রী প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আইনি লড়াইয়ে জয়ী হয়ে আলোচনার মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে স্থল সীমানা সমস্যার সমাধান এবং বিশাল সমুদ্র এলাকা ও এর সম্পদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লিখিত রূপকল্প-২০২১ অনুযায়ী বাংলাদেশকে একটি ডিজিটাল ও উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন, জাতি যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করেছে তখন বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করা আমাদের জন্য একটি বড় অর্জন। তিনি বলেন, তাঁরা এখন রূপকল্প-২০৪১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’কে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তর করতে প্রস্তুত।
 বৈশ্বিক সংকটের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে স্যাংশনের প্রেক্ষাপটে ব্রিটেন নিজেদেরকে অর্থনৈতিক মন্দার দেশ ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু আমরা এখনো সেই দুরবস্থায় পড়ি নাই। অন্তত আমি এটুকু আপনাদেরকে বলতে পারি। আমাদের সেই প্রচেষ্টা আছে। আর সেজন্য তিনি যার যতটুকু জায়গা আছে তাতে কিছু না কিছু উৎপাদন করায় তাঁর আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন। যাতে নিজেদের খাবারটা আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, কারো কাছে হাত পেতে চলতে না হয়।
নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণ, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সারাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এমনভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করেছি বাংলাদেশের যেকোন অঞ্চল থেকে ৬/৭ ঘণ্টার মধ্যে যেন রাজধানীতে এসে পৌঁছানো যায়। সেই ব্যবস্থাটা আমরা করে দিয়েছি এবং কাজ চলমান আছে, চলমান থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বাংলাদেশটাকে আমরা যে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি বা বাঙালি জাতি যেন সারাবিশে^র কাছে মাথা উঁচু করে চলতে পারে অন্তত সেটুকু করেছি । বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলার চোখে দেখে না। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবেই স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছে। তিনি একটানা সরকারে থাকার ফলেই দেশের উন্নয়নের যে কাজগুলো করতে পেরেছেন বিশে^ বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে পেরেছেন সেজন্য সহকর্মীদের ধন্যবাদ জানান। কেননা, কারো একার পক্ষে এ বিশাল কর্মযজ্ঞ সাধন সম্ভব ছিল না।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় ৪০ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি থাকা অবস্থায় ১৯৯৬ সালে দেশের শাসনভার গ্রহণ করে দেশে প্রথমবারের মতো শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরকালে ২৬ লাখ মেট্রিক টন উদ্বৃত্ত রেখে যাওয়া। দেশের বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা ১৬শ’ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৩শ’ মেগাওয়াট করা এবং পরবর্তীতে বিএনপি সরকারের তা আবার ৩ হাজার ২শ’ মেগাওয়াটে নামিয়ে ফেলাসহ বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫ হাজার মেগাওয়াট এবং স্বাক্ষরতার হার, গড় আয়ু বৃদ্ধি প্রভৃতি সাফল্যের কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। সে সময় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ’ এবং ‘মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি’, ১৯৯৯ সালে ‘বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং’ এবং ‘আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করি। আমরাই সর্বপ্রথম ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ করি।
তিনি বলেন, ২০০৮ থেকে টানা তিনবার নির্বাচনে জয়লাভের পর আমরা অত্যাধুনিক ও যুগোপযোগী সামরিক বাহিনী গঠনের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা জাতির পিতার ১৯৭৪ সালে প্রণীত প্রতিরক্ষানীতিমালার আওতায় ‘ফোর্সেস গোল-২০৩০’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন, সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন করছি। ২০১৬ সালে ‘বাংলাদেশ পিস বিল্ডিং সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করেছি। জাতির পিতা প্রণীত প্রতিরক্ষানীতি যুগোপযোগী করে ‘জাতীয় প্রতিরক্ষানীতি-২০১৮’ প্রণয়ন করেছি। আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছি।
‘সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ’ ॥ ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠান থেকে এ পর্যন্ত ৫ হাজার ৯ শ’ ৭৯ অফিসার সাফল্যের সঙ্গে কোর্স সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে ৪৪টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ১ হাজার ৩ শ’ ১ অফিসারও এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। বর্তমান কোর্সেও ২১টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ৪৬ বিদেশী কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ পুলিশের ৩ কর্মকর্তাসহ আজ মোট ২৫০ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেছেন।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,875FollowersFollow
21,200SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles