
বাংলা স্টার অনলাইন ডেস্ক-মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নেমেছে। শুক্রবার সকালে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর হাতে ফুল নিয়ে স্মৃতিসৌধে শহীদদের জন্য তৈরি বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতে যান হাজারো মানুষ। সূর্য সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিবেদনে স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদীতে ফুল দিচ্ছেন আবালবৃদ্ধবনিতা।
মিরপুরের থেকে ছোটবোনকে নিয়ে এসেছে নওরীন আভা (১৫)। তার মতে, এখানে আসলে মনে হয় বইতে যা পড়েছি। তাই চোখের সামনে থেকে দেখছি। গতবছর এসেছিলাম, এবারও এসেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শরিফুল ইসলাম নামে এক তরুণ বলেন, প্রতিবার টিভির পর্দায় দেখি বিজয় দিবস এলেই সবাই জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। এবারই প্রথম এখানে এসেছি। এর আগে কখনো সশরীরে আসা হয়নি। বিজয়ের দিনের সকালে স্মৃতিসৌধে আসা এতো মানুষ দেখে অনেক ভালো লাগছে। শহীদ বেদিতে নিজ হাতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি। এটা আমার জন্য অনেক গর্বের বিষয়।
বেসরকারি একটি সংস্থায় চাকরি করা নাজমা আক্তার এসেছেন অফিসের সহকর্মীদের সঙ্গে। তার ভাষ্যে, বিজয়ের এই দিনে লাল সবুজের শাড়ি পড়েছি। সবার মতো আমিও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছি। দেশের জন্য সকল শহীদদের ত্যাগের কথা আমরা কখনো ভুলবো না।
সাভারের বাসিন্দা জয়িতা জয়া। এসেছেন স্বামীকে সঙ্গে। জানান, ১৯৭১ সালের আজকের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা এদেশকে স্বাধীন করার জন্য তাদের জীবনের সর্বোচ্চ ত্যাগ করেন। এরপর বিজয় ছিনিয়ে আনেন। মহান বিজয় দিবসে সেই সকল বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এখানে এসে খুবই ভালো লাগছে।
শুধু শিশু, তরুণ, যুবকেরাই নন। বয়োবৃদ্ধাও আসেন শ্রদ্ধা জানাতে। পঁচাত্তর বছর বয়সী শমসের আলী বলেন, ১৯৭১ সালে নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। এই দেশকে যারা স্বাধীন করেছে তাদের কাছে আমরা চির ঋণী। তাই আজকের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আমি প্রতিবারই এখানে ছুটে আসি। আগামী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য সকলের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিৎ- বলেও প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।
বিজয় দিবসে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। তাই সৌধ এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মহান বিজয় দিবসের আগের দিন সকাল থেকেই জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ ও র্যাব।
এর আগে সকাল পৌনে ৭টার দিকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রথমে স্মৃতিসৌধের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন।
এসময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তখন রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এসময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার ৫১ বছর উদযাপন উপলক্ষে দেশজুড়ে উৎসব উৎসব রব বিরাজ করছে। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাদের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
সেই হিসাবে বিজয়ের ৫১ বছর পূর্তির দিন আজ। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনাসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত হয়েছে।