34 C
Bangladesh
Thursday, June 1, 2023
spot_img

বিশ্বকাপে ব্রাজিলিয়ানরাও চাইছেন শিরোপা জিতুক আর্জেন্টিনা

বাংরা স্টার রিপোট-ফুটবল বিশ্বকাপ এলে গোটা বিশ্ব ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নিজ দলের সাফল্যে যেমন, তেমনি প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরের ব্যর্থতায়ও সমান উল্লাসে মেতে ওঠেন সমর্থকরা। তবে সম্পর্কটা ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তানের মতো এতটা বৈরী নয়। শেষ ষোলোয় সাফল্যের পর অনেকেই সেমিতে আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল লড়াই দেখার অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে নেইমারদের বিদায়ে সেটি আর হয়নি। উরুগুয়ে-ইকুয়েডর বিদায় নিয়েছে গ্রুপ পর্ব থেকেই। লাতিন আমেরিকার দল হিসেবে টিকে আছে কেবল আর্জেন্টিনা। রবিবারের গ্র্যান্ড ফাইনালে লিওনেল মেসিদের প্রতিপক্ষ ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। আর শিরোপা ফয়সালার মঞ্চে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকেই সমর্থন দিচ্ছেন ব্রাজিলিয়ানরা। কেবল ফুটবলপ্রেমীদের সমর্থনই নয়, রোনাল্ডো-রোনলদিনহোর মতো সাবেক তারকা মাঠে বসে আর্জেন্টিনার খেলা দেখছেন। গ্রেট রিভালদোর পোস্ট, ‘তোমার প্রশংসা করার ভাষা নেই লিওনেল মেসি। রবিবার সৃষ্টিকর্তা তোমাকে মুকুট দেবেন। তুমিই এটার যোগ্য।’
ব্রাজিলের সাও পাওলোর দন্ত চিকিৎসক দস সান্তোস বলেন, ‘যেহেতু ব্রাজিল আসর থেকে ছিটকে গেছে তাই ফুটবল পাগল হিসেবে আমি মনে করি, আর্জেন্টিনার এবারের বিশ্বকাপটা প্রাপ্য।’ এই সমর্থনে কোনো লজ্জা নেই বলেও মনে করেন তিনি, ‘আমরা লাতিন আমেরিকান, জাতীয় দল নিয়ে আর্জেন্টাইনরাও আমাদের মতো খুব আবেগী। মেসির অধীনে এত ভালো একটা দলের জন্য তাদের সমর্থন দেয়াই যায়।’ ব্রাজিলের একটি জরিপকারী সংস্থার বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, ৩৩ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান আর্জেন্টিনাকে নিজেদের ‘দ্বিতীয় দল’ হিসেবে দেখে। আর ৬০ শতাংশ ব্রাজিলিয়ান চান না, চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনা শিরোপা জিতুক। সৌদি আরবের কাছে গ্রুপ-পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই হেরে বসে মেসির দল। ওই ম্যাচের পর তাদের নিয়ে ব্যাপক ট্রল করেন ব্রাজিলিয়ানরা।

আবার সেমিতে জয়ের পর ফাইনালে ওঠার আনন্দে ড্রেসিং রুমে উল্লাসের সময় গাওয়া মেসিদের গানের কথায় ব্রাজিলকে খোঁচা দিয়েছিল আর্জেন্টিনা। তবে ব্রাজিলের কিংবদন্তি ফুটবলারদের সমর্থন কিন্তু আর্জেন্টিনার প্রতি। কালোমানিক পেলে হাসপাতাল থেকে মেসিদের সমর্থন জানিয়েছেন। দেশটির সাবেক তারকাদের মতো বিশিষ্টজনও আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদ আলেক্সান্দ্রো সিলেস যেমন বলেন, ‘ব্রাজিল বাদ পড়ার পর আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করছি। কারণ মেসির মতো সেরা কাউকে দেখিনি। এই শিরোপাটা তারই প্রাপ্য।’ তার ৮ বছর বয়সী ছেলে বের্নার্দোও মেসির ভক্ত। তিনি বলেন, ‘সে মেসির খুব ভক্ত। মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে চায়। সে স্প্যানিশও শিখছে যাতে দেখা হলে মেসির কাছে অটোগ্রাফ চাইতে পারে।’ বিশ্বকাপ শুরু আগেই আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি বলেছিলেন, তার দল না পারলেও ‘লাতিন আমেরিকার কোনো দল জিতলে’ তিনি খুশি হবেন। ‘আমি লাতিন আমেরিকান ফুটবলের বড় ভক্ত। আমার প্রচুর ব্রাজিলিয়ান বন্ধু আছে। আর্জেন্টিনা যদি না পারে তাহলে আমি চাইব লাতিন আমেরিকার কোনো দল জিতুক (বিশ্বকাপ)। কেউ অন্যভাবে ভাবলে ভুল করবে। ওরা (ব্রাজিল) ভালো খেলে দুটি ম্যাচ জিতেছে, তাদের অভিনন্দন জানাই।’ অর্থাৎ মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী হলেও মাঠের বাইরে তারা লাতিন ফুটবলের বিজয়ে ঐক্যবদ্ধ, সেটি আবারও প্রমাণিত। শুধু সাধারণ সমর্থক আর তারকা খেলোয়াড়ই নন, খোদ ব্রাজিলের ফুবল সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্টও সেটাই চাইছেন, ‘আমাদের একতা বজায় রাখতে হবে।

এখন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে, আমরা সবাই আর্জেন্টাইন। আমি আশা করি তারা বিশ্বকাপটা লাতিন আমেরিকায় নিয়ে আসবে।’
ফাইনাল সামনে রেখে ব্রাজিল, আর্জেন্টাইন সবাই যেন লাতিন আমেরিকান পরিচয়ে একাকার। নেইমাররা বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নেয়ার পরই ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের অনেকে জানিয়েছিলেন, শিরোপাটা যেন এবার আর্জেন্টিনা জেতে। রিওডি জেনিরো থেকে কাতারে আসা এক নারী সমর্থক কোয়ার্টারে ব্রাজিলের বিদায়ের পর বলেছিলেন, ‘হারলেও আমরা ব্রাজিলের সমর্থকরা দলের সঙ্গেই আছি।

এখনো এই বিশ্বকাপের বাকি আছে। আমি বাকি ম্যাচগুলোতে আর্জেন্টিনাকে সমর্থন করব, যাতে ট্রফি লাতিন আমেরিকায় আসে।’ ফুটবলে শৈল্পিক সৌন্দর্য যুক্ত করেছে যারা, বিশ্বকাপ থেকে সেই মহাদেশ এতদিন ধরে দূরে থাকবে, সেটা আর্জেন্টিনার পাশাপাশি ব্রাজিলিয়ানরাও মানতে পারছেন না। ব্রাজিল তাদের রেকর্ড পাঁচ শিরোপার শেষটি জেতে ২০০২ সালে, জাপান-কোরিয়া আসরে। আর্জেন্টিনা তাদের দুই শিরোপার শেষটি জেতে দিয়েগো ম্যারাডোনার অধীনে সেই ১৯৮৬ সালে, মেক্সিকোতে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,790FollowersFollow
20,800SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles