
বাংলা স্টার ডেস্ক-চীনে ইতিমধ্যেই নতুন করেউদ্বেগ বাড়িয়েছে করোনা। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন ২০২৩ সালে চীনে কার্যত করোনা বিস্ফোরণ হতে পারে, তাতে মৃত্যু হতে পারে বহু মানুষের। চীনের পাশাপাশি ব্রাজিল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, হংকং, তাইওয়ান সহ আরো কয়েকটি দেশেও বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। আর এই পরিস্থিতিতে উদ্বেগ বাড়ছে ভারতেও। কারণ এদেশটিতেও করোনা গ্রাফের ওঠা নামা চলছেই। চীনে নতুন করে কোভিড ১৯ সংক্রমণ বৃদ্ধির পিছনে যে ভ্যারিয়েন্ট দায়ী- সেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন সাব-ভারিয়ান্ট “বিএফ.৭” এর তিনটি ঘটনার সন্ধান পাওয়া গেছে ভারতে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর এর মধ্যে দুটি গুজরাটের ভদোদরা এবং আমেদাবাদ শহরে এবং একটি উড়িষ্যার। ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট পুরসভা ও স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে অতিরিক্ত অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং সেই সাথে ওই তিন ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ রাখা হয়েছে।
ভাইরাস বিশেষজ্ঞদের অভিমত এই সাব ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত সংক্রমণশীল। মানব শরীরে প্রবেশের পরই অত্যন্ত দ্রুততার সাথে তা ছড়িয়ে পড়ে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে। এমনকি যারা কোভিডের টিকা নিয়েছেন তারাও সংক্রমিত হতে পারেন। তবে কি ফের শুরু হতে পারে লকডাউন? নানা আশঙ্কার মাঝেই বুধবার বৈঠকের ডাক দেয় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি সতর্কতামূলক ডোজ নেওয়া বাধ্যতামূলক বলে জানানো হয়েছে।
বৈঠক শেষে টুইট করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, কিছু দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কয়েকজন বিশেষজ্ঞ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করি। কোভিডের বিপদ এখনও শেষ হয়নি। আমি সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সতর্ক থাকতে এবং পর্যাপ্ত নজরদারি চালানোর নির্দেশ দিয়েছি।যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি।
পরে নীতি আয়োগের সদস্য (স্বাস্থ্য) ভিকে পল গণমাধ্যমের সামনে জানান কেন্দ্রীয় সরকার এই ভাইরাসটিকে রোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এই ভাইরাস ছড়ানো ঠেকাতে জনবহুল জায়গাগুলিতে ফেস মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। তার আশঙ্কা চীনে সংক্রমণের এই তরঙ্গ নতুন রূপান্তরের জন্ম দিতে পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বুধবার গত ২৪ ঘন্টায় দেশে নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৩১ জন। দেশে এখনো পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৭৬ হাজার ৩৩০ জন, আর মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার ৬৮০ জনের। এমন এক পরিস্থিতিতে আগে থেকে করোনা মোকাবেলায় কোমর বেঁধে নামতে চাইছে নরেন্দ্র মোদি সরকার। ইতিমধ্যে রাজ্যগুলিকে সতর্ক করা হয়েছে।
ভাইরাসের চরিত্র বুঝতে জোর দিতে হবে জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে। করোনার কোন নতুন ভ্যারিয়েন্ট এসেছে কিনা তা খুঁজে বার করতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব রাজেশ ভূষণ জানিয়েছেন, সমস্ত রাজ্যগুলিকে নিশ্চিতভাবে সবকটি করোনার পজেটিভ নমুনা প্রতিদিন নির্দিষ্ট ইন্ডিয়ান সার্স কোভিড-২ জেনোমিক্স কনসোর্টিয়াম ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে হবে – যাতে সেই নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করা যায় এবং করোনার কোন নতুন ভ্যারিয়েন্ট হলে সেটিকে ট্র্যাক করা যায়। এদিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্য, কংগ্রেস সংসদ রাহুল গান্ধী এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটকে ভারত জোড়ো যাত্রায় কোভিদ নিয়ম সম্পর্কে চিঠি লিখে গভীর নির্দেশিকা কঠোরভাবে অনুসরণ করা এবং মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার করার উপর জোর দিয়েছেন।
অতিরিক্ত সতর্কতা নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চীনে যেভাবে ছড়াচ্ছে যারা এই ভাইরাস সম্পর্কে বোঝেন তাদের নিয়ে একটি টিম গঠন করুন। ওই টিমের নেতৃত্ব দেবে রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব। সেখানে জেলা শাসক, ডিরেক্টর অফ হেলথ সার্ভিস ও বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।