
বাংলা স্টার রিপোট-মায়ের বুকের দুধ শিশুর জন্য প্রকৃতির এক বিস্ময়কর উপহার। অনেক মা দুশ্চিন্তায় থাকেন এই ভেবে, শিশুটি বুঝি পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে না। এমন দুশ্চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। এমন চিন্তা মাথায় এলে শিশুকে ওজন করান। সপ্তাহের শেষে যদি দেখেন ওজন বাড়ছে, তা হলে ঘাবড়ানোর দরকার নেই। মনে রাখতে হবে, ওজন বাড়ছে মানেই আপনার শিশু পর্যাপ্ত দুধ পাচ্ছে।
রাতে দুধ খাওয়াবেন কিনা : রাতের বেলায় ক্ষুধার কারণে শিশুরা জেগে ওঠে। প্রথম কয়েক সপ্তাহ রাতের বেলা সে ঘনঘন দুধ পান করে। ঘুমের ভেতর মায়ের হাত কিংবা দেহের চাপ শিশুর ওপর লাগতে পারে। এতে খুব অসুবিধা নেই। শিশু মায়ের স্পর্শ, উষ্ণতা, ঘ্রাণ এগুলো দারুণভাবে উপভোগ করে। অনেক সময় শিশু ঘুমানোর আগেই মা ঘুমিয়ে পড়েন। এমনও দেখা গেছে, শিশুটি রাত জেগে মায়ের ঘুম না ভাঙিয়ে দুধ খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।
বুকের দুধ খাওয়াবেন যত বছর : পুরো দুবছর। তবে চার বা পাঁচ মাস বয়স থেকে শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য পারিবারিক খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পাঁচ মাস বয়সের পর শুধু মায়ের বুকের দুধে শিশুর পুষ্টির পুরো চাহিদা মেটে না। কিন্তু মনে রাখতে হবে, বুকের দুধ পারিবারিক অন্যান্য খাবারের উৎকর্ষ অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। সে জন্য অন্যান্য খাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি অবশ্যই শিশুকে বুকের দুধ পান করাতে হবে।
যখন দুধ বন্ধ করতে হবে : চার-পাঁচ মাস বয়স থেকেই বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হবে। শিশুকে ফলের রস, সুজি, পায়েস, বিশেষ ধরনের খিচুড়ি, ডিম ইত্যাদি খাবার আস্তে-ধীরে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। তড়িঘড়ি করে বুকের দুধ ছাড়ানো একেবারে ঠিক নয়।
মা আবার গর্ভবতী হয়ে পড়লে : গর্ভকালে বুকের দুধের পরিমাণ কমে যেতে পারে। কিন্তু দুধের গুণগত মানে কোনো ঘাটতি দেখা দেবে না কিংবা বুকের দুধ খাওয়ানোর ফলে গর্ভের কোনো ক্ষতি হয় না। গর্ভবতী মা নিশ্চিন্তে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন। তবে বুকের দুধ খাওয়াতে হলে অবশ্যই গর্ভবতীর অতিরিক্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। তবে শিশু বুকের দুধ খাওয়ার সময় সন্তান নেবেন কিনা, তা বিবেচনা করতে পারেন। ঘনঘন সন্তান নেওয়া মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, কখনো কখনো মারাত্মকও।
কর্মজীবী মায়ের করণীয় : যদি মা অল্প সময়ের জন্য বাইরে যান, তবে বেরোনোর ঠিক আগের মুহূর্তে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। বেশি সময়ের জন্য বাইরে যেতে হলে শিশুকে সঙ্গে নিয়ে বেরোনো ভালো। মনে রাখা দরকার, যে কোনো জায়গায় শিশুকে বুকের দুধ পান করানো যায়।
কৃত্রিম দুধ শিশুর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায় : মাঝেমধ্যেও বোতলে করে দুধ দেওয়া উচিত নয়। বোতলের ভেতর জীবাণু থাকা অস্বাভাবিক নয়। বোতলে করে দুধ কিংবা পানি দেওয়া বিপজ্জনক। বাসায় যদি শিশুকে খাওয়ানোর বোতল থাকে, তবে সেটি ব্যবহার বন্ধ করুন। অনেকেই বলেন, গরম পানি আর সাবান মিশিয়ে বোতল ধুয়ে ফেললে সেটি জীবাণুমুক্ত হয়ে যায়। এমন যুক্তি অবশ্য অকাট্য। কিন্তু সব সময় নিখুঁতভাবে গরম পানি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করা সম্ভব নয়। সে জন্য শিশুকে যদি অতিরিক্ত কোনো দুধ খাওয়াতেই হয়, তবে বাটি বা কাপে দুধ নিয়ে চামচ দিয়ে খাওয়ান। এগুলো সহজে জীবাণুমুক্ত করা যায়।
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া : জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বুকের দুধের উৎপাদন কমিয়ে দেয়। সে জন্য স্তন্যদানের সময় এ ধরনের বড়ি খাওয়া উচিত নয়। জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য এ সময় বিকল্প পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মনে রাখা ভালো, শিশুকে মায়ের দুধ খাওয়ানোর বিষয়ে কোনো দ্বিধা করা যাবে না। যদি এ বিষয়ে মায়ের মনে কোনো প্রশ্ন তৈরি হয়, তা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
লেখক : ক্লাসিফাইড মেডিসিন
বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনলোজিস্ট
সহযোগী অধ্যাপক, সিএমএইচ