
বাংলা স্টার রিপোট-চাঁদপুর নৌ-সীমানার মেঘনা নদীর মতলব উত্তর এলাকার মোহনপুরে লাইটারেজ জাহাজ হতে ৪ কোটি টাকার চিনি পাচারের ঘটনায় জাহাজের ১১ জন ও চাঁদপুরের চিহ্নিত চোরাকারবারি ৪ জনসহ ১৫জনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে চাঁদপুর নৌ-থানার পুলিশ।
আটকদের পুলিশ আদালতে পাঠালে আদালত তাদেরকে জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
চাঁদপুর মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মনিরুজ্জামান এ আটকের বিষয়টি মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে নিশ্চিত করেছেন।
নৌ-পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, আকিজ গ্রুপ ভারত থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে পণ্যবাহী দেওয়ান মেহেদী-২ নামের একটি বড় আকারের লাইটারেজ জাহাজে করে ২০ হাজার ৩০০ বস্তা চিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে নৌপথের মোহনপুর মেঘনা নদীতে নোঙ্গর করে ৮ হাজার বস্তা চিনি রাতের অন্ধকারে চোরাকারবারি জাহাঙ্গীর আলম মরু গাজী ওরুফে মরুহাজী(৫৬), তার সহযোগী রঘুনাথপুর এলাকার শাহজাহান, পুরাণবাজারের ফজল ও ১নং ঘাটের আলী খার মাধ্যমে পাচারের পর অন্যত্র বিক্রি করে।
এই ঘটনায় আকিজ গ্রুপ অব কোম্পানীর পক্ষ থেকে মতলবের মোহনপুর নৌ পুলিশ ফাঁড়িতে একটি অভিযোগ দিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
নৌপুলিশ ফাঁড়ি মোহনপুরের ইনচার্জ মনিরুজ্জামান জানান, দেওয়ান মেহেদী-২ লাইটার জাহাজের মাস্টারসহ ১১ জনকে আটক করে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী চাঁদপুরে চিহ্নিত চোরাকারবারি জাহাঙ্গীর আলম মরু হাজীসহ চারজনের নাম প্রকাশ পায় পুলিশ। পরে তাদের আটক করে আদালতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নৌ পুলিশ সূত্রে আরো জানা গেছে, মরুগাজী গং আকিজ গ্রুপের ৮ হাজার বস্তা চিনি সেই লাইটার জাহাজ থেকে স্টীলবডি ট্রলারে নামিয়ে ফরিদপুরের বাকিতুল্লাহ বিশ্বাসের কাছে বিক্রি করে। পরে চিনিগুলো ফরিদপুর, মাদারীপুর ও কুষ্টিয়াায় পাচার করে দেওয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, চোরাকারবারিদের গডফাদার হচ্ছে, চাঁদপুরের জাহাঙ্গীর আলম গাজী ওরফে মরুহাজী। তিনি চাঁদপুর স্ট্যান্ড রোডের মৃত কেরামত গাজীর সন্তান। তিনি দীর্ঘ বছর যাবৎ নদীতে লাইটারেজ জাহাজ থেকে বিভিন্ন পণ্য চোরাচালানির মাধ্যমে ক্রয়-বিক্রয় করে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। চাঁদপুর শহরের স্ট্র্যান্ড রোডে তার নিজস্ব পাঁচতলা আলিশান ২টি বাড়িসহ নামে বেনামে সম্পতি রয়েছে অনেক।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙরে এমভি লয়েলিটি নামের একটি মাদার ভেসেল থেকে আকিজ গ্রুপের ১ হাজার ১৫ টন চিনি খালাস করে গত ১৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জের উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করেছিল এমভি দেওয়ান মেহেদী-২ নামের লাইটারেজ জাহাজটি। মোট ২০ হাজার ৩শ’ বস্তা চিনি ছিলো জাহাজে। কিন্তু বহির্নোঙরে খালাস নেয়ার পরও যথাসময়ে গন্তব্যে না পৌঁছিয়ে চিনির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিস্ট পক্ষগুলোর মালিকরা খোঁজাখুঁজি শুরু করে। আমদানিকারকদের পক্ষে স্কট থাকার পরও কিভাবে জাহাজটি থেকে চিনি লোপাট হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে!
যদিও পাল্টাপাল্টিভাবে জাহাজের নাবিকরা বলছে, সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত দল তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে চিনিগুলো লুটে নিয়েছে। কিন্তু পরিবহনের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদারের অভিযোগ, জাহাজের নাবিকরাই সুকৌশলে এসব চিনি বিক্রি করে দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। সূত্র জানান, মেঘনা নদীর ষাটনল ও এখলাসপুর এলাকায় জাহাজ নিয়ে চিনিগুলো লোপাট করা হয়।
অভ্যন্তরীন নৌ-রুটে চলাচলকারী জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ওয়াাটার ট্রান্সপোর্ট সেলের (ডব্লিউটিসি) নির্বাহী পরিচালক মাহবুব রশিদ জানান, চিনি পরিবহনের জন্য লাইটারেজ জাহাজটির বরাদ্দ নেয়া হয়ে ছিল গত ১২ ডিসেম্বর।
জাহাজটির মালিকানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এমএসটি মেরিন এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক প্রদীপ চক্রবর্ত্তী বলেন, জাহাজের সকলকে আটক করেছে নৌ-পুলিশ। নিরাপত্তার জন্য স্কট থাকার পরও কীভাবে কোটি কোটি টাকার চিনি পাচার হলো তা তদন্ত করছে সংশ্লিস্ট প্রশাসন।
এ বিষয়ে চাঁদপুর নৌ থানার ওসি মোঃ কামরুজ্জামান জানান, আসামীদের ধরতে আমরা তৎপর আছি। অতি দ্রুতই সব প্রশ্নের উত্তর মিডিয়াসহ সকলকে জানানো হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিস্ট এলাকার থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।