33 C
Bangladesh
Thursday, June 1, 2023
spot_img

সিডনিতে ‘বেগম রোকেয়া’ দিবস উদযাপন

বাংলা স্টার ডেস্ক –১৮৮০ সাল এবং পরবর্তী সময়কাল- অভিজাত মুসলিম পরিবারের মেয়েদের শৈশব কাটে কঠোর পর্দা ও অবরোধের মাঝে। মেয়েদের শিক্ষা ‘টিয়া পাখির মতো কুরআন শরিফ পাঠ’, নামাজ-রোজা প্রভৃতি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পর্কে জ্ঞান, রান্না, সেলাই-ফোঁড়াই, স্বামী বা নিকটাত্মীয় স্বজনদের চিঠি লিখতে পারা, বড়জোর দু-একখানা উর্দু ফারসি পুঁথি-পুস্তক পড়ার ক্ষমতা- এর মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। 

অশিক্ষা ও ধর্মীয় কুসংস্কারের এই ঘোর অন্ধকারে একজন নারীর শৈশব থেকেই ছিল পারিবারিক নির্ধারিত শিক্ষার বাইরে অজানাকে জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, ছিল উর্দু ফারসির পাশাপাশি মাতৃভাষা বাংলা ও ইংরেজি শেখার এক দুর্নিবার আগ্রহ। তার সূত্র ধরেই বড়বোন ও ভাইয়ের সাহায্যে তিনি গোপনে মাতৃভাষা বাংলা ও ইংরেজি শেখা শুরু করেন। কে জানত অন্তঃপুরের অন্ধকার গলি থেকে তিনি শিক্ষা ও জ্ঞানের আলোর মশাল হাতে সাহিত্য ও সমাজ পরিবর্তনের রাজপথে নেতৃত্বের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠবেন? 

১৮৯৮ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই ভাগলপুরের উর্দুভাষী ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পর স্বামীর উৎসাহেই তার আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ালেখা পুরোদমে শুরু হয় এবং তিনি সাহিত্যচর্চা শুরু করেন। তিনি তার প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাসের মধ্য দিয়ে সমাজের সর্বাঙ্গীন উন্নয়নে নারীশিক্ষার প্রয়োজনীয়তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেছেন। হাস্যরস, কটাক্ষ ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মাধ্যমে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে নারীর অবরুদ্ধ অবস্থা এবং তা থেকে উত্তরণের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

১৯০৯ সালে স্বামীর মৃত্যুর পর তিনি ভাগলপুরে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ নামে একটি মেয়েদের স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন৷ পরবর্তীতে পারিবারিক কারণে ভাগলপুর ছেড়ে কলকাতায় এসে ১৯১১ সালে ১৩ নম্বর ওয়ালীউল্লাহ্ লেনের একটি বাড়িতে তিনি আবারো দ্বিগুণ উদ্যমে মাত্র আটজন ছাত্রী নিয়ে ‘সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল’ চালু করেন।

এই মহীয়সী নারীই হলেন আমাদের বেগম রোকেয়া। নারী শিক্ষা ও পুরুষ নারীর সমান অধিকারের অন্যতম প্রবক্তা। মেয়েদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে যিনি ‘সুলতানার স্বপ্ন রাজ্য’-এর মতো সমাজ ব্যবস্থার কথা ভেবেছেন। তার শানিত লেখনি, সাহিত্যচর্চা, মেয়েদের জন্য স্কুল ও মুসলিম মহিলা সমিতি প্রতিষ্ঠা সবকিছুরই উদ্দেশ্য ছিল অবরোধ প্রথার বিলুপ্তি, নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিশ্চিত করা।

৯ ডিসেম্বর ছিল বেগম রোকেয়ার মৃত্যু দিবস। বাংলাদেশে এই দিনটি রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ‘রোকেয়া দিবস’ হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং কীর্তিমান মেয়েদের ‘রোকেয়া পদকে’ ভূষিত করা হয়।

একটু দেরিতে হলেও গত ২৪ ডিসেম্বর বিকালে ‘পড়ুয়ার আসর’ রোকেয়া দিবস উপলক্ষ্যে রুনু রফিক এবং রফিক উদ্দিনের বাসভবনে এক বিশেষ স্মরণসভা ও পাঠ কর্মসূচি পালন হয়েছে। 

অনুষ্ঠানের প্রথমেই নাসরিন মোফাজ্জল পবিত্র কুরআন থেকে তিলাওয়াত করেন এবং তারপর বেগম রোকেয়ার রূহের মাগফিরাত কামনা করা হয়। এরপরই রোকেয়া আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের মূলপর্ব শুরু হয়। প্রথমেই বেগম রোকেয়ার জীবনী পাঠ করেন শামসুন্নাহার বিউটি ও নুরুন্নাহার বেগম। 

তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে বেগম রোকেয়ার ‘অবরোধবাসিনী’ লেখায়, সেখান থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেন যথাক্রমে- রীনা আক্তার, শামীমা আলমগীর, লায়লা লজি, লুৎফা সিদ্দীকা, আজিজা শাদাত, রুনু রফিক, রানী নাহিদ, রওশন আরা পারভীন ও সীমা আহমেদ। মতিচূর গ্রন্থে প্রকাশিত বেগম রোকেয়ার প্রথম প্রবন্ধ ‘স্ত্রীজাতির অবনতি’ সম্মিলিতভাবে পাঠ করেন নাসরিন মোফাজ্জল, বুলা হাসান ও লতা খান। 

এরপর সম্মিলিতভাবে একে একে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ ‘অর্ধাঙ্গী’সহ অন্যান্য প্রবন্ধ, কৌতুক কণা ও বেগম রোকেয়ার লেখা চিঠি পাঠ করা হয়। পাঠের পাশাপাশি নারীর অগ্রযাত্রায় তার অবদান নিয়ে মতবিনিময় করা হয়। বেগম রোকেয়াকে নিয়ে লেখা কবি রামচন্দ্র দাসের ‘আঁধার বিনাশী আলো’ কবিতাটি অত্যন্ত চমৎকার ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে আবৃত্তি করেন নুরুন্নাহার বেগম। 

বেগম রোকেয়া নারী জাগরণ ও সামগ্রিক সমাজ উন্নয়নের এক হৃদয়স্পর্শী আহ্বান জানান ‘সুবহে সাদিক’ প্রবন্ধে। এ প্রবন্ধটি যৌথভাবে পাঠ করেন নাসরিন মোফাজ্জল ও রোকেয়া আহমেদ। সবশেষে ‘জাগো নারী জাগো বহ্নি শিখা’সহ অন্যান্য গান পরিবেশন করেন সীমা আহমেদ, রুনু রফিক ও রানী নাহিদ।

অনুষ্ঠান শেষে ছিল রুনু রফিকের আতিথেয়তায় নৈশ্যভোজের বিশেষ আয়োজন। আগামী বছর ‘পড়ুয়ার আসর’ কর্তৃক রোকেয়া দিবস আরও ব্যাপক পরিসরে পালন এবং নারীর কল্যাণে কাজ করার প্রত্যয় জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,790FollowersFollow
20,800SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles